Visitor Counter


hit counter

Translate

ইউনিভার্সিটি ছাত্রছাত্রীরা কেন গ্রাফিক ডিজাইন শিখবে……

ক্রিয়েটিভ কাজ সব সময় দেখতে সুন্দর হয়ে থাকে। এতে করে যেকোনো ক্রিয়েটিভ মানুষ তার ভেতর থাকা সৌন্দর্য বোধকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। এই সৌন্দর্য প্রকাশ করার মাধ্যম অনেক কিছু হতে পারে। কেউ হয়তো এটা করছেন শখের বশে, আবার কেউ প্রফেশনালি, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কাজ করার ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে। এসব ক্রিয়েটিভ কাজ শেখার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানও বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারি বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে এবং প্রতিষ্ঠান দক্ষ শিক্ষকদের দ্বারা এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
জীবনে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পর্যাপ্ত নয়। সময়ের সাথে নিজের জীবনকে উজ্জ্বল করতে প্রয়োজন কারিগরি শিক্ষা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিন্তা-ভাবনা করলে আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি গড়ে উঠেছে। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায় সেই পরিমাণ কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয় নি। তাই তো প্রতি বছর দেশের একটি বিশাল অংশের কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দিচ্ছে। অপরদিকে সারাবিশ্বের কর্মসংস্থানের কথা বিবেচনা করলে উঠে আসে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের গল্প। উন্নত দেশগুলোতে আমরা দেখতে পাই, এসব দেশের মানুষজন গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার পর ঘরে বসে থাকে না। এমনকি অনেকে ছাত্রছাত্রীরা আছে যারা ইউনিভার্সিটি বা কলেজে পড়ার সময়েই আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠে।
আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরাও তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের আনুসাঙ্গিক খরচ বহন করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং বা বিভিন্ন আউটসোর্সিং এর সাথে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে প্রচুর পরিমাণে অধ্যবসায় ও সময় ব্যয় করতে হবে। তবে তার মানে এই না যে, ইউনিভার্সিটি পড়াশোনার ক্ষতি করে এসব কাজ করতে হবে। আসলে ছাত্র জীবনে স্কিল ডেভেলপমেন্টের ব্যাপারটিই বেশ চ্যালেঞ্জিং। ছাত্রছাত্রীদের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সেটাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে। বাস্তবিকপক্ষে কারিগরি শিক্ষা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। এদিক থেকে বর্তমান সময়ে গ্রাফিক ডিজাইন সেক্টরটি সারাবিশ্বের অনলাইন মার্কেট প্লেসগুলোর পাশাপাশি জব সেক্টরে বড় ভূমিকা পালন করছে। এই সেক্টরে থেকে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের মেধা ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করছেন। সম্মান বয়ে আনছে আমাদের দেশের জন্য। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কিভাবে বুঝবো আমি গ্রাফিক ডিজাইনে দক্ষতা, বা  ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইন কতটা আস্থাভাজন পেশা। খুব সহজভাবে উত্তর দিতে গেলে বলা যায়, আপনার হাতে থাকা বই বা সংবাদপত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের প্রেস মিডিয়া, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ফ্যাশন ডিজাইন, টেক্সটাইল ডিজাইন, ফটোগ্রাফি, গেম ডিজাইন, ফাইন আর্ট, ব্র্যান্ডিং, লোগো, কার্টুন মেকিং, ইন্টারেক্টিভ মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, ওয়েব মিডিয়া, ইনফরমেশন মিডিয়া, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, টেক্সটাইল সেক্টর – এই সব সেক্টরে গ্রাফিক ডিজাইন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে।
তাই একজন ইউনিভার্সিটি ছাত্রছাত্রী হিসেবে তার কেন Graphic Design শেখা অপরিহার্যতা তা নিয়ে আজ আমি আলোচনা করতে যাচ্ছি। চলুন শুরু করি……………………

১। নিজের ক্রিয়েটিভিটি প্রকাশ
নিজের ক্রিয়েটিভিটি প্রকাশের এক অন্যতম উপাই হল গ্রাফিক ডিজাইন। ছোটখাটো আঁকা-আঁকির অভ্যাস থাকলে এটি একটি প্লাস পয়েন্ট হিসেবে যুক্ত হবে। তবে ডিজাইনিং সেক্টরে কেউই প্রথম দিকে প্রফেশনাল লেভেলের হয়ে থাকে না। আস্তে আস্তে বিভিন্ন প্রফেশনাল ডিজাইনারদের কাজ থেকে ধারণা পাওয়া সম্ভব। মনে করি, একটা ভালো ডিজাইন আপনার খুব মনে ধরেছে। সেক্ষেত্রে, আপনি সেই ডিজাইনের ছবি তুলে রাখলেন এবং বাসায় গিয়ে পরে সেই ডিজাইনটি বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত করে আলাদা একটি ডিজাইনে রুপ দিলেন। ঠিক এভাবে, ডিজাইনের আইডিয়া বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া সম্ভব। যেকোন স্থান থেকে প্রাপ্ত কোন ডিজাইন হয়ে উঠতে পারে অপূর্ব, আপনার সৃজনশীলতা ও সুন্দর।

২। সময়ের সুষ্ঠ ব্যবহার
ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা পড়াকালীন সময়ে বিভিন্ন কোর্সের পড়াশোনা করার পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে পারে। এখানে একজন শিক্ষার্থী সব সময় একটা কর্মস্পৃহার ভেতর থাকে। এতে করে সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। যা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে সহায়তা করে।

৩। নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন
আমি আগে তো বলেছি, ডিজাইন সেক্টর বরাবর বৈচিত্র্যময় এবং মজার। গ্রাফিক ডিজাইন শেখার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একই রকম। ইউনিভার্সিটি বিভিন্ন কোর্স থাকে যেগুলো নিয়ম অনুযায়ী পড়াশোনা করেই ভালো করা যায়। গ্রাফিক ডিজাইনের ব্যাপারটি কিন্তু এরকম না। এখানে কাজ করার জন্য কোনো উন্নত ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রয়োজন হয় না। আঁকা আঁকির প্রতি অনেক ইচ্ছা থাকলেই হয় । আমি আমার এক বড় ভাই গ্রাফিক ডিজাইনে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বেশ ভালো সুনাম কুড়িয়েছেন। অর্থাৎ নন-আইটি ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রছাত্রীরাও এই সেক্টরে ভালো করতে পারেন। ডিজাইনের জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার যেমনঃ Adobe Photoshop, Illustrator, InDesign এসব সফটওয়্যারে ধীরে ধীরে দক্ষ হতে শুরু করুন। এতে একদিক দিয়ে আপনি যেমন ডিজাইনের কিছু নতুন সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা পাবেন অপরদিকে ডিজাইনের বিভিন্ন টুলসে আপনার দক্ষতা বাড়বে।

। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পার্টিসিপেটে সুযোগ 
যেসব ডিজাইনার আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেন তাদের জন্য প্রথম পছন্দের আউটসোর্সিং কাজ হচ্ছে ডিজাইন প্রতিযোগিতাতে অংশগ্রহন করা। এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে একদিক থেকে যেমন অর্থ উপার্জন করা যায় অপরদিকে অন্যান্য সকল প্রতিযোগীদের থেকে ডিজাইন সম্পর্কে তার কি ধারণা, মতামত সেসব জানা যায়। 99 Design, Freelancer, এসব প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণের জন্য জনপ্রিয় সাইট।

। শক্তিশালী পোর্টফোলিও তৈরি
একটা শক্তিশালী পোর্টফলিও আকাউন্ট তৈরি করে আপনার ডিজাইনগুলো রাখুন, যারা মার্কেট প্লেস গুলোতে ফ্রীলান্সার হিসাবে কাজ  করতে চান তাদের জন্য ডিজিটাল বায়োডাটা বা পোর্টফলিও  খুব  প্রয়োজন। বিভিন্ন সাইটে সিভি বা পোর্টফলিও বানানো সম্ভব হলেও নিজের জন্য একটা পোর্টফলিও ওয়েবসাইট বানিয়ে নেয়াই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এই পোর্টফলিও ওয়েবসাইটে থাকবে লোগো, আপনার বায়োডাটা, আপনার করা বিভিন্ন ডিজাইন, আপনার সাথে থাকবে যোগাযোগ অপশন, আপনি যে ধরনের ডিজাইন করেন তার বর্ণনা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর লিঙ্ক এবং একটা ব্লগ,  আর এই পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটটি অবশ্যই নিয়মিত আপডেট রাখা দ্রকার।

 ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে প্রচুর পরিমাণে ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়াশোনা করছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন স্বল্পতার কারণে একটি বড় সংখ্যা বেসরকারি ইউনিভার্সিটি পড়াশোনা করছে। বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে পড়াশোনা বেশ ব্যয়বহুল অনেক শিক্ষার্থীকেই এই ব্যয় বহন করতে বেশ হিমশিম খেতে হয়। এসব ক্ষেত্রে অনেক ছাত্রছাত্রীরা পার্টটাইম জোগাড় করে নিজের হাতখরচ চালায়। কিন্তু কেউ যদি গ্রাফিক ডিজাইন শিখে পড়াশোনার পাশাপাশি টুকটাক লোগো, ফ্লায়ার কিংবা ব্রশিউর ডিজাইন করতে পারে তবে তাকে পার্টটাইম জবের জন্য বাইরে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। ঘরে বসেই সে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসের ও লোকাল ক্লায়েন্টদের অর্ডার অনুযায়ী কাজ করতে পারে। এসব কাজ করে সে খুব সহজেই বাসায় বসে অনলাইনে অর্থ উপার্জন করে নিজের হাত খরচের অর্থ বহন করতে পারবে।
তো বন্ধুরা কেমন লাগলো আজকের বিষয়। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। লেখাগুলো বুজতে বা লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে কমেন্ট করে জানাবেন। ভালো থাকবেন সবাই। আসসালামু আলাইকুম……।

No comments:

Pages